সিফাতের অতীত এবং বর্তমান – অনুপ্রেরণার জন্য যথেষ্ট নয়?

গ্রাফিক ডিজাইনে সিফাতের সফলতার গল্প

গ্রাফিক্স ডিজাইনের সাথে পরিচিত আমি বহু বছর যাবত। যখন ক্লাস ফাইভ এ পরি তখন বাসায় প্রথম কম্পিউটার আসে ভাইয়ার। গেম খেলার নেশা খুব ছিল আর এখন আছে। গেমএর wallpaepr গুলো দেখতাম আর ভাবতাম কবে যে আমিও এমন wallpaper বানাবো।

Sifats success story

ঢাকাই থাকতাম বড় খালার কাছে। খালাত ভাইকে দেখতাম ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটরে কাজ করতে আর এই সফটওয়্যার গুলো দিয়ে অনেক কিছু ডিজাইন করতে। সেখান থেকে গ্রাফিক্স এর কাজের প্রতি নেশা আর বাড়ে। টাইম পেলেই ফটোশপ নিয়ে বসে পরতাম আর নিজে নিজেই কিছু শেখার চেষ্টা করতাম। কারন শেখানোর মত কেউ ছিল না। কেও আমাকে কোন দিক থেকে পাত্তাই দিত না। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল প্রবল। কাউকে দরকার নেই। নিজেই শিখে নেব। বিভিন্ন টুলস নিয়ে ঘাটাঘাটি করতাম। ইমেজ কাটিং, মেনুপলেশন সহ আর অনেক কিছুই অল্প অল্প করে মাথাই ঢুকে যাই কিন্তু সব গুলাই ছিল সিম্পল কাজ। কোন পরফেশনাল কিছু না। যাস্ট আইডিয়া নেওয়া। তখন ক্লাস ৮-১০ এ পরি (সাল ২০১২-১৪)।

কোন রকমে এস এস সি পাস করলাম। শুরু থেকেই লেখাপড়াই ছিলাম চরম ব্যর্থ। ভাল রেজাল্ট যে করতেই হবে বা এ+ যে পাওয়াই লাগবে এমনটা মোটেও ইচ্চা ছিল না। কিছু শিখতে আর শিখে সেই শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারলেই হবে, যে যা ইচ্ছা তাই বলুক। লক্ষ্য একটাই কখন চাকরি করব না। নিজে কিছু করব। সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ার ইচ্ছাটা কিন্তু আছেই।

এসএসসি এর পরে চলে আসি চট্টগ্রাম (২০১৪)। ভর্তি হলাম ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ। সখ থেকে নিলাম কম্পিউটার সাইন্স। কিন্তু যেই উদ্দেশ্যে নিলাম তা পূরণ হল না আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার কারনে (এই বিষয়টা নিয়ে আপাতত আলচনা না করি। লম্বা কাহিনি।) এর মধ্যে ২০১৫ তে গ্রাফিক্স এর কাজ শেখার জন্য একটা কোর্স করি ৭৫০০/- দিয়ে New*****on থেকে। কিন্তু সেইটাও ভাল ভাবে কাজে লাগেনি কারন আর্থিক সমস্যার কারনে কম্পিউটার কেনা হইনি তখন। কম্পিউটার কেনার জন্য অনেক কষ্টে কিছু টাকা জমিয়ে খালাত ভাইকে দিয়েছিলাম কিন্তু সে সেই টাকা গুলা নিজের কাজে খরচ করে। এইদিকে আমার কোর্স চলমান। কোন প্রাকটিস করতে পারলাম না। যা শিখলাম তাও কিছু দিনের মধ্যে অনেকটাই ভুলে গেলাম। এখানেও ব্যর্থ।

এই ৭৫০০ টাকার কোর্স থেকে শুধু মাত্র টুলস এর ব্যাবহার শেখানো হয়েছিল আর কিছু না। আর যেই টিউটরিয়াল গুলা শেখানো হয়েছিল তাও সব ইউটিউব থেকে কপি করা। আমার শেখা অনেকটাই অসম্পূর্ণ থাকল। কোন ভাবেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানো যাচ্ছে না। নিজের কম্পিউটারো নেই যে নিজে থেকে প্রাক্টিস করব। এর মধ্যে দেখা দিল পারিবারিক সমস্যা আর আর্থিক শঙ্কট। শুরু করলাম একটা এম এল এম কম্পানিতে কাজ (২০১৫)। এখানে সম্মুক্ষিন হলাম জিবনের চরম ব্যর্থতার। দের বছরে কোন ইঙ্কাম নেই। বাসা থেকে এক টাকা দেয় না। নিজের খরচ নিজেকে চালাতে হই। এমন সময় দিন রাত পরিস্রম করি কিন্তু এঙ্কাম হইনা এক টাকা। আর এম এল এম এর ইঙ্কাম পলিসি কম বেশি সবাই জানি। নো জয়েনিং নো ইঙ্কাম। এই ভাবে পার হল দের বছর।

শুরু করলাম একটা জামা কাপরের দোকানে কাজ(২০১৬)। এখানেও ব্যর্থ কারন কোন এক্সপেরিএন্স নেই। বেশি সেল দিতে পারতাম না। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান মালিকের গালি শুনতাম। আর চট্টগ্রামের মানুষের মুখের গালি খুব জঘন্য শ্রেণির। যা আমি অতীতে কোনদিন শুনিনি। দোকান মালিক পরিচিত হওয়াই কাজ শুরুর আগে কোন বেতন চুক্তি করিনি পরিনামে এক মাস দৈনিক ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করে মাসিক বেতন পেলাম ৩০০০ টাকা। নিজেকে পুরাই অস্তিতহীন মনে হই। এর মধ্যে আর্থিক সঙ্কটের কারনে নিজের পরালেখা বন্ধ হয়ে যাই।

কিছু মাস পরে কাজ ছেরে দিলাম। এখন পুরাই বেকার আর চরম অবস্থা। বাসা থেকে সবসময় খারাপ কথা আর থাকা খাওয়ার খুটা। কয়েকবার বাসা থেকে বের ও করে দিয়েছে কারন আমি কোন টাকা না দিয়ে ফ্রীতে থাকি খাই (নিজের বাসাই বা ফ্যামিলিতে থাকিনা)। কিন্তু আমি হতাশ না। জানি সুযোগ নিজে ধরা দেবে না তাই সুযোগ এইবার নিজে তৈরি করলাম।

বাবার মৃত্যুর পর দাদার দেওয়া শেষ এক টুকরো জমি ছিল যা কম্পিউটার কেনার জন্য বিক্রি করে দিই আর নিজের কম্পিউটার কিনি আর কিছু টাকা ব্যাকআপ হিসাবে সিস্টেম করে রাখি যেন সেই টাকা দিয়ে মাসের ইন্টারনেট খরচটা চালাতে পারি (২০১৭)। এরপর ইউটিউবে ভিডিও দেখা শুরু করলাম। গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শেখা শুরু করলাম আর কিভাবে ইঙ্কাম করা যাই তা দেখতে থাকলাম। একপরজাই শুরু করলাম ডাটা এইট্রি এর কাজ যা বেশি দিন করে পোষাতে পারলাম না। এখানেও ব্যর্থ। ভাল ভাবে মনোযগ দিলাম ডিজাইনিং শেখার কাজে আর এর মধ্যে একদিন পেয়ে গেলাম লাইফের টারনিং পয়েন্ট। অবশেষে এতদিনে।

ইয়টিউবে ভিডিও দেখতে দেখতে হটাত একদিন Recomended Video তে পেলাম প্রফেশনাল বিজনেস কার্ড ডিজাইনিং এর একটা ভিডিও। ভিডিও থাম্বনেইল টা ভাল লাগলো। দেখা শুরু করলাম। তারপর সাথে সাথে ভিডিও লাইক, চ্যানেল সাবস্ক্রাইব আর চ্যানেলে অন্য সব ভিডিও দেখা শুরু। এক কথাই ‘এত দিনে এইটাই তো চাচ্ছিলাম। Just Aweeeeeeesome!!!!!!’ দেখালাম ফুল ফটোশপ কোর্স এর ডিভিডি রিলিজ করেছেন তিনি। যেকোন ভাবেই হোক তা নিতেি হবে কিন্তু দাম ৩০০০ টাকা আর আমার কাছে নেই এত টাকা। কি করা যাই??? তাহলে কি এখানেও ব্যর্থ?!?! না………।

১/২ মাস পার হলো। চ্যানেলের ফ্রী ভিডিও গুলো দেখতে থাকলাম। এর মধ্যে একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম। আম্মু সমিতি থেকে টাকা নেবে। শেখান থেকে আমিও কিছু টাকা নিলাম মাসিক কিস্তিতে আর কিনে ফেললাম সেই সোনার হরিন (ডিভিডি)। পরে অপেক্ষা করতে থাকলাম একটা ফোন কলের জন্য। পরের দিন দুপরে কল আসল- কিরিং কিরিং…… আপনি সিফাত বলছেন? কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারলাম ইনি আর কেউ না শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আবু নাসের। যার ফ্রি ভিডিও গুলো এত দিন দেখে কাজ শিখছি। ভাই অর্ডার কনফার্ম করলেন। ৩ দিন পর ডিভিডি পেলাম। কাজ শেখা শুরু করলাম। সব ইন্সট্রাকশন গুলা ফলো করতে থাকলাম যদিও প্রথম দিকে ফলো করিনি আর কয়েকটা মারকেটপ্লেসে ধরাও খেয়েছি) এর পর সিরিয়াস হলাম।

গ্রুপের পর পর প্রথম ৪টা প্রজেক্ট উইন হলাম। আবু নাসের ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে ফাইবার এ কাজ শুরু করলাম আর আল্লাহর রহমতে আর আবু নাসের ভাইয়ের সর্বস্ব সহযোগিতাই ৩ মাসের মধ্যে লেভেল ১ অরজন করলাম আর ক্লাইন্ট দের কাছ থেকে অনেক প্রশংশা অর্জন করলাম। আর এখন সফলতার সাথেই কাজ করে যাচ্ছি আর প্রতি মাসে গড়ে ১৮-২০ হাজার টাকা আমার ইঙ্কাম থাকছে যা আমি কখন কল্পনাও করিনি যে এত ব্যর্থতার মদ্ধ্যেও এমন কিছু সম্ভব।

আবু নাসের ভাই এর এই ঋণ আমি পরিশোধ করতে পারব না কারন আমি জানি একসময় আমি কোন পরিস্থিতিতে ছিলাম আর ভাইয়ের অছিলায় আর আল্লাহর রহমতে আজ ধিরে ধিরে কন পরজাই যাচ্ছি। আবু নাসের ভাইয়ের জন্য মন থেকে দোয়া করি যেন আল্লাহ ওনাকে সকল সফলতা দান করেন। তিনি আমাদের জন্য ক্রিয়েটিভ ক্লান নামক যেই প্লাটফরমটি ক্রিয়েট করেছেন তা আমার মত অনেক বেকার আর অশহাই ছেলে মেয়েদের জন্য একটা লাইফ চেঞ্জিং প্লাটফর্ম।

জিবনে এখন পর্যন্ত অনেক বাধা বিপত্তি আর সমস্যার সম্মুক্ষিন হয়েছি যা এখানে লিখে বোঝান সম্ভব না। আর এটাও জানি যে আগামিতে আর অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আর তার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। কারন আমি শিখেছি Life is not to give up. অতিতে অনেক ব্যর্থ হয়েছি, এখন অনেক সফলতা পাচ্ছি আবার ভবিষ্যতে অনেক ব্যর্থ হবো। তবে সবসময় এইটাই মনে রাখব প্রতিটা সফলতার গল্পের অপর পৃষ্ঠাই থাকে ব্যর্থতার এক চরম সত্য উপ্যনাস। আজকের ব্যর্থতা আগামির মটিভেশন।

যারা আমার মত নিজে থেকে লাইফে কিছু করতে চান বা গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এ নিজেদের ক্যারিয়ার তৈরি করতে চান তারা নির্দ্বিধাই ক্রিয়েটিভ ক্লান প্রিমিয়াম গ্রুপ বেছে নিতে পারেন। আমি ক্রিয়েটিভ ক্লান এর মারকেটিং করছি না। নিজে কিছু পেয়েছি আর তা আপনাদের সামনেই আছে তাই আপানদেরকে ভাই হিসাবে একটা পরামর্শ দিলাম।

সবশেষে আবারো অশেষ ধন্যবাদ আবু নাসের ভাইকে। অশেষ শুক্রিয়া আল্লাহকে। ধন্ন্যবাদ আপনাদেরকে কষ্ট করে সময় নিয়ে আমার লেখা গুলা পরার জন্য। সকলের মঙ্গল এবং সফলতা কামনা করি। ভাল থাকবেন সবাই। আল্লাহ হাফেজ!

– মোহাম্মাদ সিফত

অর্জিনাল পোস্ট এখানে

অন্যান্য যে পোস্টগুলো আপনার পড়া প্রয়োজন

  1. গ্রাফিক ডিজাইন কিভাবে শিখবেন? কোথায় শিখবেন?
  2. ফ্রিল্যান্সিং কে পেশা হিসাবে নিতেহলে যেই বিষয় গুলা অবশ্যই জানতে হবে
  3. ফ্রিল্যান্সিং/আউটসোর্সিং ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে আপনি যেভাবে ঠকতে পারেন
  4. নতুন গ্রাফিক ডিজাইনার? মাথায় আইডিয়া আসে না? (এই পোস্ট পড়ুন)
  5. আপনি যে কারনে ডিজাইনার হতে পারবেন না (Case Study)

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn
Get monthly free recourse

Subscribe To Our Monthly Update

No spam, notifications only about new products, updates.

ফিচার্ড প্রোডাক্ট সমূহ

ফিচার্ড আর্টিকেল

বিষয় ভিত্তিক আর্টিকেলস

On Key

Related Posts

কেনভা এসেনশিয়াল টিউটোরিয়াল

কেনভা বেসিক জেনে নিন টপিক লিস্টঅন্যান্য যে পোস্টগুলো আপনার পড়া প্রয়োজন প্রথমে বাংলায় একটা টিউটোরিয়াল দেখে নিজের বেজ তৈরি করুন।  https://www.youtube.com/watch?v=eIwRNjVF6Eg কাস্টম শেপ তৈরি করা

থিমফরেস্ট এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেস কিভাবে শিখবো?

থিমফরেষ্টের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস শিখার বিষয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপে মোহাম্মাদ আব্দল্লাহ নামের একজনের প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুল হাসান এই উত্তর গুলো দিয়েছেন। ৫ টি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন

freelancer pronodona

ফ্রিল্যান্সাররা পাবেন ৪% প্রনোদনা (৫৫ মার্কেটপ্লেসের ইনকামে)

বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছেন ফ্রিল্যান্সাররা ৫৫ টি মার্কেটপ্লেসের ইনকামে ৪% করে প্রণোদনা পাবেন। রোববার ৩০ জানুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ স্বীকৃত এসব

Shopping Cart